04 February 2014

** কুমিল্লাকে নিয়া অসাধরণ একটি লেখা। সবাই পড়বেন **




আল্লাহর রহমতে আমরা এমন একটি জেলায় বাস করি যে জেলা স্বমহিমায় মহিমান্বিত। আমাদের বলতে হয় না ওমক জেলার পাশে, ওমক জেলার পিছনে, ওমক জেলার পশ্চিমে। সবাই এক শব্দে কুমিল্লাকে চিনে। ভৌগলিক কারনে আমরা এমন একটি জেলায় বাস করি যেখানে বেশি শীত ও পরে না আবার বেশি গরমও পরে না। তীব্র শীতে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের হাড় কাপিয়ে দিলেও আমরা তার সামান্যই টের পাই। আবার গরমে দেশের পশ্চিমাঞ্চল পুড়ে ছাড়খার হওয়ার উপক্রম হলেও সেই উত্তাপ আমাদের গায়ের ঘাম টুকুই ফেলতে পারে। কুমিল্লাকে বলা যায় বাংলাদেশের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল। যা আমাদের উপর আল্লাহ পাকের বিরাট রহমত। আমরা এমন একটি অঞ্চলে বাস করি যেখানে প্রাকৃতিক দূর্যোগ হয় না বললেই চলে।

বঙ্গোপসাগরের নিন্মচাপ, লঘুচাপ কুমিল্লার উপর দিয়ে সামান্য ডাল-পালা নাড়িয়েই চলে যায়। তাইত আমরা টের পাইনা সিডরের ভয়াবহতা, নার্গিসের ভয়াল থাবা কিংবা আইলার হৃদয় কাপানো গর্জন। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দূর্যোগ সমূহে আমাদের সাহায্য নিতে হয় না উল্টা আমরা দূর্যোগকবলিত জেলাগুলোতে সাহায্য পাঠাতে পারি। গৃস্মকালে একটু কাল বৈশাখি ঝড় হয়। কিন্তু তাতে বড় ধরনের ক্ষতির খবর পাওয়া যায় না। ভৌগলিক কারনে আমরা ভুমিকম্পের দিক থেকে সেইফ জোনে আছি। এখানে ভুমিকম্পের তীব্রতা আচ করা যায় না। কুমিল্লা থেকে ভুমিকম্পের উৎপত্তির সম্ভাবনাও কম।

কুমিল্লার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা কি আর বলব। কুমিল্লার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে মৌ মৌ করে পর্যটকরা ছুটে আসে। হাজার বছরের ঐতিহ্যে ভরা শালবন বিহার, লাল মাটির গরা লালমাই পাহাড়, পাখির কিচিরমিচির আর প্রাকৃতিক নিঃস্তব্ধতায় ভরা শালবন দেখতে সেই প্রাচীনকাল থেকেই পর্যটকরা ছুটে আসত। ৭ম শতকে বিখ্যাত পর্যটক ফা হিয়েন এর পদচারণায় ধন্য হয়েছিল কুমিল্লা। আরও আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ওয়ার সিমেট্রি। বাংলাদেশের মাত্র দুটি স্থানে রয়েছে ওয়ার সিমেট্রি। কুমিল্লা শহরে অবস্থিত ধর্ম সাগর আর পার্ক আজও পর্যটিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।তাইত পর্যটিকদের আক্ষেপ করতে শোনা যায় আর কয়েকদিন যদি কুমিল্লা থাকতে পারতাম।

কুমিল্লার সবচেয়ে বড় দিক হচ্ছে এর ভৌগলিক অবস্থান। ঢাকা,চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সংযোগ হওয়ায় যোগাযোগ ক্ষেত্রে কুমিল্লার দুর্দান্ত প্রভাব। কুমিল্লার মানুষ রাস্তায় নেমে আসলে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাতে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। বিভাগীয় সদর দপ্তর বাদে মাত্র যেই তিনটি জেলায় সিটি কর্পোরশন রয়েছে কুমিল্লা তার মধ্যে একটি। প্রাচীনকাল থেকেই কুমিল্লা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কুমিল্লাতে রয়েছে রপ্তানিযোগ্য শিল্প-কারখানা।

কুমিল্লাতে আরও আছে সেনানিবাস, ক্যাডেট কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। যা দেশের গুটি কয়েক জেলাতেই রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনে কুমিল্লার মানুষের স্বতঃফুর্ত অংশগ্রহণ ছিল। পুর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা বাংলা করার দাবি যিনি সর্ব প্রথম উথাপন করেছিলেন সেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন কুমিল্লারই কৃতি সন্তান। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সরকারেও ছিলেন খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। বর্তমান রাজনীতিতেও কুমিল্লার প্রভাব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। বিগত জোট সরকারের আমলে কুমিল্লা থেকে ৫ জন মন্ত্রী ছিলেন। আর কোন জেলা থেকে একসাথে এত বেশি মন্ত্রী হওয়ার নজির নেই। বর্তমানে আইসিসির সহ-সভাপতিও কুমিল্লার ছেলে।

কুমিল্লার ভাষার রয়েছে বিশেষ মাধুর্যতা। বাংলাদেশের এমন কোন লোক নাই যে কুমিল্লার ভাষা বুঝতে পারে না। কিন্তু অন্য জেলার ভাষার ক্ষেত্রে তা নয়। আপনি সিলেটে বাস করে চট্টগ্রামের ভাষা কিছুই বুঝতে পারবেন না। ঢাকায় বসে নোয়াখালীর ভাষা শুনলে মনে হবে বিদেশী কোন ভাষা। কৌতুক বা মজা করার জন্য কুমিল্লার ভাষা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফ্যান ম্যাগাজিন গুলোতে যে ভাষা ব্যবহার করা হয় সেটা কুমিল্লার ভাষা। বরিশাইল্লা, নোয়াখাইল্লা, চাটগাইয়া এ রকম কোন গালি আমাদের কেউ দিতে পারবে না। কারন কুমিল্লাইয়া, কুমিল্লাট্টি এই রকম শব্দ ম্যাচ খায় না আমাদের সাথে। আমাদেরকে সম্ভোধন করতে হলে সোজা ভদ্র ভাষায় কুমিল্লাবাসী বলা ছাড়া আর কোন উপায় নাই।

কুমিল্লা দেশের বৃহৎ জেলা গুলির অন্যতম। তাই কুমিল্লা বিভাগ হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কুমিল্লার মানুষের অতিথি পরায়ণতা আর কি বলবি। যারা কুমিল্লায় অতিথি হয়ে এসেছেন তারাই জানেন কুমিল্লার মানুষ কতটা অতিথি পরায়ণ। এই স্বল্প পরিসরে কুমিল্লার গুনকীর্তি বলে শেষ করা যাবে না। এমন একটি জেলায় বাস করতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।

শেয়ার করুনঃ

Author:

কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।

0 facebook: